বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে কার্গো পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও পাঠাতে পারবে না বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

ছবির উৎস, UNK
- Author, সাইয়েদা আক্তার
- Role, বিবিসি বাংলা, ঢাকা
প্রায় দুই বছর পর ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে কার্গোবাহী সরাসরি বিমান চলাচলের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
এর মানে বাংলাদেশ হতে আজ থেকেই যেকোনো পণ্য সরাসরি কার্গোবাহী বিমানে করে যুক্তরাজ্যে পাঠানো যাবে।
তবে এই সুবিধা এখনই পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা- বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এয়ার কার্গো নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি সনদের নবায়নের পরই কেবল এ সুবিধা পাবে বিমান।
বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে ব্রিটিশ সরকার, ২০১৬ সালের ৮ই মার্চ দুই দেশের মধ্যে কার্গোবাহী সরাসরি বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল।
একই সঙ্গে বলা হয়েছিল, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে যাত্রীবাহী সরাসরি ফ্লাইটও বন্ধ করে দেয়া হবে।
এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৬ সালের মার্চেই একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান -রেডলাইন অ্যাসিউর্ড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
প্রায় দুই বছরের কাজের অগ্রগতিকে বিবেচনায় নিয়ে আজ ব্রিটিশ সরকার কার্গোবাহী সরাসরি বিমান চলাচলের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল না। সেটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও রাজনৈতিক নয়।"
"২০১৬ সালে অত্যন্ত দুঃখ সহকারে সিদ্ধান্তটি আমাদের নিতে হয়েছিল। কারণ আমরা জানতাম পণ্য পরিবহন কতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। কিন্তু সেসময় সন্ত্রাসীদের তরফ থেকে একটি বাস্তব ঝুঁকি ছিল, যারা বিশ্বের বহু জায়গাতেই বিমানে বোমা পেতে রেখেছিল। আমাদের মত বাংলাদেশের সরকারও সেসময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজনটি বুঝতে পেরেছিল। এটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু আজ আমরা লক্ষ্যে পৌঁছেছি," বলেন তিনি।

এসংক্রান্ত ব্রিটিশ সরকারের পাঠানো একটি চিঠি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী শাহজাহান কামালের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। তবে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়মিত মনিটর করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব ত্রুটির কারণে পণ্যবাহী বিমানের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, সেসব বিষয়ের প্রতিটির ক্ষেত্রে সরকার কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী শাহজাহান কামাল।
তিনি বলেছেন, "ইতিমধ্যে এক্সপোর্ট কার্গোর জন্য বানানো বিশেষ নিরাপত্তা জোনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্র স্থাপন হয়েছে।"
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বাংলাদেশ হতে আজ থেকেই যেকোনো পণ্য সরাসরি কার্গোবাহী বিমানে করে যুক্তরাজ্যে পাঠানো যাবে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, হিমায়িত মাছ, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার, কাঁচাপাট ও পাট-পণ্য এবং বাইসাইকেল ইত্যাদি রফতানি করা হয়।

ছবির উৎস, Getty Images
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে এখন ব্যবসায়ীরা অর্থ ও সময় দুই দিকেই সাশ্রয় করতে পারবেন।
"এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা হয়েছে, তা হলো আমাদের ইমেজের ক্ষতি। নিরাপত্তা ইস্যুতে কিছু হলে সেটা পুরো দেশেরই ক্ষতি। এখন সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসলাম। সেই সঙ্গে আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল সেটাও আমরা কাটিয়ে উঠব এখন। কারণ ব্রিটেন আমাদের পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ।"
নিরাপত্তার উন্নয়নে নিযুক্ত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এই মার্চে। এরপর থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেখ-ভাল করবে বলে জানা যাচ্ছে।








