ওসমান হাদির অবস্থা 'খুবই ক্রিটিক্যাল, তবে তিনি বেঁচে আছেন'

(এই প্রতিবেদনের কিছু বর্ণনা পাঠকের মানসিক চাপের কারণ হতে পারে)

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে তার অপারেশন হয়।

ওসমান হাদির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদ রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তার কন্ডিশন খুবই খারাপ। ক্রিটিক্যাল বলতে যা বোঝায় তাই।"

হাসপাতালে নিয়ে আসার পরও তার 'সাইন অফ লাইফ' বা জীবিত থাকার লক্ষণ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, "অপরেশন চলার সময়েও আমাদের এনেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন উনার এফোর্ট আছে। এর মনে হলো নিজস্ব শ্বাসপ্রশ্বাসের শক্তি আছে"।

"এখনো কিন্তু উনি বেঁচে আছেন" বলেন তিনি।

অপারেশন চলাকালে মি. হাদির দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলেও জানান ডা. জাহিদ রায়হান।

"উনার নাক দিয়ে মুখ দিয়েও রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। আমরা পেশেন্টের ব্যাপারে কোনো আশার কথা বলবো না, তবে উনি এখনো বেঁচে আছেন, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা"।

ভালো আইসিউই সাপোর্টের জন্য ওসমান হাদির স্বজনরাই এবারকেয়ার হাসপাতালে তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন বলে তিনি জানান।

ওসমান হাদির মাথার একপাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে বলে ধরে নিয়েছেন চিকিৎসকরা, এ কথা জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, "বুলেট যদি ভেতরে থেকেও যায়, আমরা ধরে নিলাম মগজের ভেতরে আছে। ওটা একদম মগজের সেন্টার পয়েন্টে। ওখানে অ্যাপ্রোচ করার কোনো প্রয়োজন নাই, ওটা করাও হয় না"।

"তবে বুলেটটা বের হয়ে গেছে। এক দিক দিয়ে ঢুকে আরেক দিক দিয়ে... বের হয়ে গেছে। তবে বুলেটের কিছু ফ্রেগমেন্ট (অংশ) ব্রেনের ভেতর থেকে গেছে। আমরা যখন অপারেশন করেছি কিছু ফ্রেগমেন্ট আমরা পেয়েছি। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করেছি, খুব ছোটো ছোটা ফ্রেগমেন্ট"।

তথ্য চেয়েছে ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশ বা ডিএমপি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে চেষ্টা করছে বলেও জানানো হয়।

ডিএমপি জনিয়েছে, থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।

এই ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা থাকলে তা কাছের থানায় অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানাতে নগরবাসীকে অনুরোধ করেছে পুলিশ।

এদিকে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে একইভাবে বিএনপির আরেক প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছিল।

"আমরা দেখেছি গত এক বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা হুমকি দিয়েছে প্রকাশ্যে যে প্রত্যাশিত নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে, সে নির্বাচনকে তারা হতে দেবে না, বাধাগ্রস্ত করবে। একটি দল, গোষ্ঠী বা কিছু ব্যক্তি এই দেশকে, দেশের মানুষের শান্তি স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে," ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্তব্য করেন তিনি।

"যারা এই দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চায়, এ দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে, এই দেশের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করতে চায়, তারা তাদের ষড়যন্ত্র যে শুরু করে দিয়েছে, আজকে ওসমান হাদির ঘটনা দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে"।

তদন্তের স্বার্থে বিএনপির নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদিকে, ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা "প্রমাণ করে যে সমাজের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে" এবং "সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা নির্বাচন কমিশনের প্রধানতম দায়িত্ব" বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। দলটির ফেসবুক পেজে তার এই বক্তব্য পোস্টা করা হয়েছে।

দলটি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রতিবাদ মিছিলও করেছে।