আপনি এই ওয়েবসাইটের একটি টেক্সট(লিখিত) সংস্করণ দেখছেন, যা কম ডেটা ব্যবহার করছে। ছবি ও ভিডিওসহ মূল সংস্করণ দেখতে এখানে ক্লিক করুন
ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িত 'কেউ গ্রেফতার হয় নি', জানাল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ
বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের সাহায্য করার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
সোমবার নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টটিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অবশ্য ওসমান হাদি বা বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে নি।
রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিল যে ওসমান হাদির খুনিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়েছে এবং তাদের সহায়তা করার জন্য মেঘালয় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
সেই দাবি আগেই খারিজ করে দিয়েছে মেঘালয়ের পুলিশ এবং ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
মেঘালয় পুলিশের মহা-পরিচালক ইদাশিশা নংগ্রাং-এর এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে, পলাতক খুনিদের সহায়তা করার জন্য ওয়েস্ট গারো হিলস জেলায় দুজন গ্রেফতার হয়েছে বলে যে খবর বাংলাদেশ থেকে দাবি করা হয়েছে, তার কোনও "ভিত্তি নেই"।
আবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বিএসএফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের ইন্সপেক্টর জেনারেল ওম প্রকাশ উপাধ্যায় বলেছেন, "মেঘালয়ের হালুয়াঘাট দিয়ে কোনও ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে এসেছে, এরকম কোনও প্রমাণ নেই।"
রোববার রাতে অবশ্য ঢাকার পুলিশ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করেছে যে, তাদের গ্রেফতার করা আসামি ও সীমান্ত এলাকার সূত্রে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা ওই দাবি করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যা বলেছে
সোমবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের সরকারি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে যে সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু পোস্ট তাদের নজরে এসেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স প্রতিবেশী দেশের কয়েকজন নাগরিককে আটক করা হয়েছে সেদেশের একটি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে।
"এই সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন," লিখেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ফেসবুকের কিছু পোস্টে সোমবার দাবি করা হয়ে যে ওসমান হাদির খুনিদের সাহায্য করার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ পাঁচ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে।
এই বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলেও দাবি করা হয় সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে। সীমান্ত এলাকায় একজন মানবপাচারকারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল।
এখন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আনুষ্ঠানিক ভাবেই জানিয়ে দিল যে ওই তথ্যের কোনও ভিত্তি নেই।
এধরণের 'গুজব ছড়ানো থেকে বিরত' থাকতেও অনুরোধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
মেঘালয়ের আগেই অস্বীকার
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ রোববার দাবি করেছিল যে ওসমান হাদির পলাতক খুনিদের সীমান্ত পেরিয়ে মেঘালয়ে আশ্রয় নিতে সহায়তা দেওয়ার জন্য পুত্তি এবং সামি নামে দুজনকে পুলিশ আটক করেছে।
তবে মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংগ্রাংকে উদ্ধৃত করে ভারতের টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে লেখা হয়েছে যে ওই গ্রেফতারির কোনও খবর নেই।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, "ঢাকা পুলিশের কর্মকর্তারা যে দাবি করেছিলেন যে ওয়েস্ট গারো হিলসে এমন দুজনকে আটক করা হয়েছে, যারা পলাতক খুনিদের সহায়তা করেছিল, তা খারিজ করে ডিজিপি ইদাশিশা নংগ্রাং এক বিবৃতি জারি করেছেন।
মিজ. নংগ্রাংকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে যে "বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু প্রতিবেদনে যেমনটা লেখা হয়েছে যে ৩২ বছর বয়সি হাদির খুনিরা কোথায় আছে, সেসব 'ভিত্তিহীন'।"
শিলং থেকে প্রকাশিত পত্রিকা 'শিলং টাইমস' সোমবার এ সংক্রান্ত খবরটিকেই তাদের শীর্ষ শিরোনাম করেছে।
ওই প্রতিবেদনে পত্রিকাটি মেঘালয় পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, "অভিযুক্তরা গারো হিলস এলাকায় রয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও গোয়েন্দা তথ্য নেই। ওই কর্মকর্তা এটাও জানিয়েছেন যে স্থানীয় পুলিশও এরকম কোনও চলাচলের (সীমান্ত পার হওয়ার) ঘটনা চিহ্নিত করে নি। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।"
ডেকান ক্রনিকল সংবাদপত্র নাম উল্লেখ না করে শিলংয়ে পুলিশ সদর দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করেছে।
ওই পত্রিকাকে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে সরকারি অথবা অনানুষ্ঠানিক – কোনও ভাবেই এরকম কিছু জানানো হয় নি তাদের। সংবাদমাধ্যমে যে দুজন অভিযুক্তের নাম করে বলা হচ্ছে, তাদের গারো হিলসে পাওয়া যায় নি, কাউকে গ্রেফতারও করা হয় নি।
ওই কর্মকর্তা ডেকান ক্রনিকলকে জানিয়েছেন, "ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যাচাই না করে এবং সমন্বয় না করেই এই ভাষ্যটা দেওয়া হচ্ছে।"
শিলংয়ে বিএসএফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের আইজ ওম প্রকাশ উপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ঢাকা পুলিশের ওই দাবিগুলি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিমূলক।
মি. উপাধ্যায় বলেছেন, "হালুয়াঘাট অঞ্চল দিয়ে কোনও ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরা করে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছ, এরকম কোনও প্রমাণ নেই। এরকম কোনও ঘটনা বিএসএফ ধরতে পারে নি বা কোনও তথ্যও নেই।"
এদিকে রোববার রাতে ঢাকার পুলিশ তাদের বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে যে, এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় পুলিশের সূত্রের ভিত্তিতে মেঘালয়ে দুই ব্যক্তিকে আটকের খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে ঢাকার পুলিশ আশা প্রকাশ করেছে যে, সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারত সরকার পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।