করোনা ভাইরাস: যে কারণে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে পারলো না অনলাইন শপগুলো

    • Author, নাগিব বাহার
    • Role, বিবিসি বাংলা, ঢাকা

মার্চ মাসের শেষদিক থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি থাকায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় এবং মানুষের ঘরের ভেতরে থাকার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে অর্ডার করার প্রবণতা বেড়েছে। তবে অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ অনেক বাড়লেও সেই অনুপাতে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা ও ডেলিভারি দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

বাংলাদেশে গত কয়েকবছর ধরে ফুডপান্ডা, হাঙ্গরি নাকি বা পাঠাও ফুডের মত অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করার চল তৈরি হলেও শাকসবজি, মাছ-মাংস বা রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাজার সদাই কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহার করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশ কম ছিল।

কিন্তু সাধারণ ছুটির সময়কার দুই মাসে মানুষের এই প্রবণতা হঠাৎ করেই বহুগুণ বেড়েছে।

একইসাথে বেড়েছে ইলেকট্রনিক পণ্য, মোবাইল ফোন বা দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য অনলাইনে কেনার প্রবণতাও।

তবে মানুষের মধ্যে অনলাইনে অর্ডার করার চাহিদা বাড়লেও মানুষের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনলাইনে এই ধরণের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিতে পারছে না বলে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।

পণ্য ডেলিভারির সময় নিয়ে অভিযোগ তুলে ঢাকার বাসিন্দা উম্মে হানি সালমা বলেন, "শাক-সবজি, মাছ-মাংসের মত পণ্য অর্ডার দিলে আগে একদিন, খুব বেশি হলে তিনদিন সময় নিতো। কিন্তু সাধারণ ছুটির মধ্যে অর্ডার ডেলিভারি করতে ১০-১২দিন পর্যন্ত সময় নিতে দেখেছি।"

আরেকজন সেবা গ্রহীতা মাকসুদা মোমিন জানান তিনি অনলাইনে একটি ব্র্যান্ডের পণ্য অর্ডার করলেও তাকে ডেলিভারি দেয়া হয় আরেকটি ব্র্যান্ডের পণ্য। "আর তা নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করার পর সঠিক পণ্যটি পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়, ভোগান্তিও কম হয়নি।"

অথচ করোনাভাইরাস মহামারির সময় মানুষের অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানোর যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছিলো এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর।

চাহিদামত সেবা দিতে না পারার কারণ কী?

বাংলাদেশে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান চালডালের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ বলেন হঠাৎ বাড়তি চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে গ্রাহকদের সেবা দিতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট পরিমাণ সক্ষমতা না থাকা।

জিয়া আশরাফ বলেন, "সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার অর্ডার আসতো আমাদের, আর আমাদের সক্ষমতা ছিল দৈনিক সাড়ে তিন হাজার মানুষকে অর্ডার দেয়ার।"

"কিন্তু ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন আমরা দেখলাম দিনে ১৬ থেকে ১৭ হাজারের মত অর্ডার আসছে, অর্থাৎ আমরা যেই পরিমাণ অর্ডার প্রতিদিনে ডেলিভারি দিতে পারি তারও চার-পাঁচগুণ বেশি।"

এই কারণে অনেক অর্ডার ডেলিভারি দিতে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে বলে মন্তব্য করেন জিয়া আশরাফ।

এছাড়া সাধারণ ছুটির সময় মানুষের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অতিরিক্ত পরিমাণে কিনে মজুদ করে রাখার প্রবণতার কারণে পণ্যের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আরো বেশি প্রকট হয়েছে বলে মনে করেন জিয়া আশরাফ।

তবে মি. আশরাফ জানান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ওয়্যারহাউজ খোলায় এবং নতুন জনবল নিয়োগ করায় অর্ডার ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে আগের মত দীর্ঘ সময় লাগছে না তার প্রতিষ্ঠানের।

'ঋণ ও আর্থিক সুবিধা না পাওয়া অন্যতম প্রধান সমস্যা'

চালডালের চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের একজন পরিচালকও। বাংলাদেশে এই ধরণের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যথাযথভাবে ব্যবসা করতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালাকে দোষারোপ করেন তিনি।

"একটা ই-কমার্স স্টার্ট আপকে বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে চায় না বা সহায়তা করতে চায় না। ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রয়োজনীয় ফান্ডিং পায় না উন্নতি করার জন্যে। অর্থায়নের সহজলভ্য ব্যবস্থা থাকলে ও সময়মতো ফান্ডিং পেলে চাহিদা তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হতো, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।"

অর্থায়ন সহজলভ্য হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেতে সক্ষম হবে এবং সাধারণ মানুষও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন জিয়া আশরাফ।

বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সেবা দেয়ার সক্ষমতা অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"ঢাকায় যদি এখন নিউ ইয়র্কের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়, অর্থাৎ সবাইকে ঘরে থাকতে হয় এবং দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয় - তাহলে প্রতিদিন প্রায় এক লাখের মত মানুষকে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে শাক-সবজি, চাল ডাল, মাছ-মাংসের মত পণ্য সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সবগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মিলে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার মানুষের কাছে দিনে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো।"