'দুর্নীতির ধারণা সূচক তৈরির পদ্ধতি সঠিক নয়': টিআই-এর রিপোর্টের জবাবে দুর্নীতি দমন কমিশন

    • Author, কাদির কল্লোল
    • Role, বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক তৈরির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০১৮ সালের 'ধারণা সূচক' অনুসারে বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বেড়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এ সূচক নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই 'ধারণা জরিপের' পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। সরকারের একজন মন্ত্রীও বলছেন, টিআই-এর প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে ঢালাওভাবে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও খারাপ হয়ে চার ধাপ পিছিয়ে গেছে। এটাকে তিনি বাংলাদেশের জন্য 'বিব্রতকর' বলে মন্তব্য করেন।

টিআইবি বলেছে, ঘুষ লেনদেন, সরকারি ব্যবস্থাকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার, সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং স্বজনপ্রীতি- এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় দুর্নীতির ধারণা সূচক।

তবে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মনে করেন, এই ধারণা সূচক তৈরির পদ্ধতি সঠিক নয়।

"আমরা প্রতিবারই তাদেরকে বলি যে, আপনাদের জরিপের পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের বলেন এবং তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমাদের জানান। সেগুলো থাকলে আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে দুর্নীতি বেড়েছে, নাকি কমেছে। কিন্তু মানুষের কাছে শুনে বা ধারণা করে আপনি কিভাবে তা নিশ্চিত করবেন?" - প্রশ্ন তোলেন মি. মাহমুদ।

"বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ তার মধ্যে আপনার স্যাম্পল কতটুকু, আপনি কয়জনকে শুনেছেন? আর শোনা কথা দিয়ে পরিসংখ্যানগত মূল্যায়ন করা ভাল প্রাকটিস নয় বলে আমি মনে করি। এটি সঠিক হয় না।"

তবে টিআইবি দাবি করেছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিতেই দুর্নীতির এই ধারণা সূচক তৈরি করা হয়।

৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে দুদকও তাদের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে।

কিন্তু টিআইবি বলছে, অর্থ পাচার এবং বড় দুর্নীতির ব্যাপারে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দুদক তা অস্বীকারও করছে না।

আরো পড়তে পারেন:

অন্যদিকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি আছে এটা ঠিক কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে।

"আমার কথা একদম স্পষ্ট, দুর্নীতি আছে। আমি এর সাথে পুরোপুরি একমত। কিন্তু আমি মনে করি, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দেখছি এখন রাজনৈতিক কমিটমেন্টেরও কোন কমতি নেই। আমরাও পুরো স্বাধীনভাবে কাজ করছি এবং আমাদের কিছু কিছু অ্যাকশনে যারা দুর্নীতি করে বা দুর্নীতিবাজ তারা অন্তত চিন্তা করে।"

"কিন্তু স্যুইপিং কমেন্ট বা মন্তব্য করাটা কারও পক্ষে ঠিক নয় যে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি কমার দিকে। তবে কোন কোন সেক্টরে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন যে বেড়েছে। ঢালাওভাবে আপনি বলতে পারেন না দুর্নীতি বেড়ে গেছে।"

সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও মনে করেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা হয়েছে।

"সুনির্দিষ্ট করে, ভেঙে ভেঙে যদি দেখানো হতো, কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি বেড়েছে, তাহলে আমাদের জন্য ব্যবস্থা নেয়া সহজ হতো। এমনি তারা শুধু বলে, বেড়েছে। ঠিক আছে আমরা তা নিয়ে কনসার্ন আছি। কিন্তু পুরো ডায়াগনোসিস রিপোর্ট দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।"

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির এই ধারণা সূচকে বাংলাদেশকে প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০১ সালে।

এরপর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির এই ধারণা সূচক নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।

আরো পড়তে পারেন: