বিশ্বকাপ ২০১৮: শেষ ষোলোতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন মেসি-রোনালদো

১৯৭০'এর পর বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডের সবচেয়ে বেশি গোল হওয়ার দিনে সর্বকালের সেরা দু'জন খেলোয়াড়ের একজনও গোল করতে পারেননি।

শেষ ষোলো'র ম্যাচে দলকে জেতাতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-লিওনেল মেসি কেউই।

ফ্রান্স ও উরুগুয়ের কাছে আর্জেন্টিনা আর পর্তুগাল হারায় নকআউট পর্বের প্রথম দিনেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন বিশ্ব ফুটবলের দুই আইকন।

ফলে ফুটবলের সবচেয়ে বড় অর্জন বিশ্বকাপ বিজয়ের স্বপ্নও হয়তো শেষ হয়ে গেল দুই কিংবদন্তীর জন্যই।

এই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়া মেসি ও রোনালদোর বয়স যথাক্রমে ৩১ আর ৩৩। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে তাঁদের বয়স হবে ৩৫ ও ৩৭। সেসময় তাদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। এমনকি তাদের ঐ বিশ্বকাপে খেলতে দেখা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেকের।

'বিশ্বকাপ থেকে মেসিকে ফিরে যেতে দেখা দু:খজনক'

কাজানে হাত থেকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড খুলে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় নিষ্প্রাণ মেসি একবারও পেছনে ফিরে তাকাননি।

উত্তেজনা ও আবেগে ভরা ম্যাচে নিজের সর্বস্ব দিয়েছিলেন মেসি। তিনটি গোলের মধ্যে দু'টিতে অ্যাসিস্ট ছিল তাঁরই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতাতে পারেননি দলকে।

জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান বলেছেন এবারের আসরে আর্জেন্টিনা "মেসিকে কখনো খুঁজেই পায়নি"।

"প্রথমার্ধে তাঁকে অনেকটা একাই খেলতে হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে খুব অল্প সময়ই পায়ে বল পেছেন মেসি।"

বার্সেলোনায় মেসি দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যেই সহায়তাটা পান তার কিছুমাত্র সহায়তা তিনি আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পাননি।

স্প্যানিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ গুইয়েম বালাগ বলেছেন, "মেসি - যিনি হয়তো সর্বকালের সেরা ফুটবলার - ফিরে যেতে দেখার মধ্যে এক ধরণের দু:খ রয়েছে।"

"মেসি জানতেন তিনি এই দল নিয়ে খুব বেশী দূর যেতে পারবেন না। তিনি একা দলকে জেতাতে পারবেন না তাও জানতেন তিনি। আর্জেন্টিনা দল হিসেবে একেবারেই সমন্বয়হীন ছিল আর তারা সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে খেলেছে। সেরা দল হিসেবেই ম্যাচ জিতেছে ফ্রান্স।"

যতটা কার্যকর হবেন বলে আশা করেছিলেন ততটা না হলেও রাশিয়া ২০১৮ কিন্তু মেসির জন্য খুব একটা বিশেষত্বহীনও ছিল না।

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের সময় তাঁর চিন্তিত মুখের ছবিটি ছিল আর্জেন্টিনার পুরো আসরের পারফরমেন্সের প্রতীকী চিত্র।

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গোল করে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হওয়া মেসি দলকে পরের পর্বে তুললেও, নক আউট পর্বে ফ্রান্সের বাঁধা পেরোতে পারলেন না।

মেসি'র বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান

  • ২০০৬ থেকে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ৭৫৬ মিনিট খেলে একটিও গোল করতে পারেননি মেসি।
  • বিশ্বকাপে ৬৬২ মিনিট গোল না পেয়ে থাকার পর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গোল করতে সক্ষম হন মেসি।
  • বিশ্বকাপে করা মেসি'র ৬টি গোলের তিনটিউ নাইজেরিয়ার বিপক্ষে।
  • শনিবার ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা ম্যাচে লক্ষ্যে থাকা আটটি শটের সাতটিতেই গোল হয়েছে। ৮৫ মিনিটে মেসি'র শটটিই শুধু জালে জড়ায়নি।
  • গ্রুপপর্বে প্রথম দুই ম্যাচে যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশী শট নিয়েছেন মেসি (১২টি)। কিন্তু গোল পাননি একটিও।

আরো পড়তে পারেন:

রোনালদোর এখনো 'অনেক কিছু দেয়ার আছে'

স্পেনের বিপক্ষে অসাধারণ এক হ্যাট-ট্রিক দিয়ে এবারের আসর শুরু করেন রোনালদো। স্পেনের বিপক্ষে নেয়া তাঁর ফ্রিকিক এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলগুলোর মধ্যে একটি।

মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচেও তাঁর গোলেই জয় নিশ্চিত করে পর্তুগাল। যদিও ইরানের বিপক্ষে একটি পেনাল্টি মিস করেন তিনি। ঐ ম্যাচে লাল কার্ডও দেখার সম্ভাবনা ছিল রোনালদোর।

আর মেসি'র মত তিনিও নক আউট রাউন্ডে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন তাহলে কি ২০১৬'র ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা রোনালদো কি এখানেই শেষ?

পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস মনে করেন, দলের অধিনায়কের 'ফুটবলকে এখনো অনেক কিছু দেয়ার আছে' এবং এখনই তিনি সম্ভবত জাতীয় দল থেকে অবসর নেবেন না।

রোনালদোর বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান

  • স্পেনের বিপক্ষে রোনাল্ডোর তৃতীয় গোলটি কোনো মেজর টুর্নামেন্টে রোনালদোর প্রথম ফ্রিকিক থেকে করা গোল। ঐ ফ্রিকিক ছিল কোনো মেজর টুর্নামেন্টে রোনাল্ডোর ৪৫তম ফ্রিকিক।
  • পর্তুগালের হয়ে মেজর টুর্নামেন্টে রোনাল্ডোর পেনাল্টির সফলতার হার ৫০%। দুইবার তিনি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন (২০০৬'এ ইরান ও ২০১৮'তে স্পেনের বিপক্ষে) আর মিস করেছেন দুইবার (ইউরো ২০১৬'তে অস্ট্রিয়া ও ২০১৮'তে ইরানের বিপক্ষে)।
  • বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে ৫১৪ মিনিট খেলেছেন রোনাল্ডো কিন্তু কখনো গোল দিতে বা অ্যাসিস্ট করতে সক্ষম হননি।